ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র
চতুর্থ অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস
WB Class 8 History
(১) নিচের বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয় - ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ বোম্বাইতে প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা স্থাপিত হয় - ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ কোন্ ব্যবস্থার ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো করের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারতেন না? - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে
প্রশ্নঃ ‘সূর্যাস্ত আইন’ যুক্ত ছিল - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে
প্রশ্নঃ ভারতে প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয় - বোম্বাইতে
প্রশ্নঃ ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ হয় - ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত - কৃষকের স্বত্বকে খারিজ করে প্রজায় পরিণত করা হয়েছিল
প্রশ্নঃ কোন্ ব্যবস্থার ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো করের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারতেন না? - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়েছিল - বাংলায়
প্রশ্নঃ কৃষির সংকটের ফলে কোম্পানির রেশম ও কোন জিনিসের রফতানিতে ভাটা পড়েছিল? - কার্পাস
প্রশ্নঃ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কৃষকদরদি ‘Tenancy Act’-এ বলা হয় - আদালতের পরোয়ানা ছাড়া কোনো রায়তকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না
প্রশ্নঃ ভারতে নীল চাষের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল - পূর্বাঞ্চল
প্রশ্নঃ বোম্বাইতে প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা স্থাপিত হয় - ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্নঃ ‘সূর্যাস্ত আইন’ যুক্ত ছিল - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে
প্রশ্নঃ নবাবি আমলে জমিদারদের থেকে রাজস্ব আদায় করতেন - নবাব
প্রশ্নঃ কোন ব্যবস্থার ফলে জমিদারদের জমির ওপর স্থায়ী অধিকার জন্মাত? - চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
প্রশ্নঃ কোন ভূমি ব্যবস্থায় কৃষকেরা সরাসরি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অধীনে ছিলেন? - রায়তওয়ারি
প্রশ্নঃ কাচামাল রফতানির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান দ্রব্য ছিল - কাঁচা সুতো
প্রশ্নঃ ‘মহলওয়ারি বন্দোবস্ত’ চালু হয়েছিল - উত্তর ভারতে
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত - কৃষকের স্বত্বকে খারিজ করে প্রজায় পরিণত করা হয়েছিল
প্রশ্নঃ ব্রিটিশ ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রতীক ছিল - রেলপথ
প্রশ্নঃ কোন ব্যবস্থায় কৃষকদের ‘রায়ত’ বলে জানা যেত? - রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত
প্রশ্নঃ কৃষিসংকট কোন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে? - দেশীয় হস্তশিল্প
প্রশ্নঃ ‘সূর্যাস্ত আইন’ যুক্ত ছিল - চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে
প্রশ্নঃ কৃষক জমি হারিয়ে ভাগচাষি বা বর্গাদারে পরিণত হয় কোন্ অঞলে? - বাংলায়
প্রশ্নঃ ‘দাদন’ বলতে বোঝায় - অগ্রিম অর্থ
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন - কর্নওয়ালিশ
প্রশ্নঃ কোন ব্যবস্থার ফলে জমিদারদের জমির ওপর স্থায়ী অধিকার জন্মাত? - চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
প্রশ্নঃ দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে বলে - সম্পদের বহির্গমন
(২) নিচের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ বাংলায় কৰে ভয়ঙ্কর দুর্ভ ও ন্তর দেখা যায়?
উত্তরঃ ১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক ও মন্তর দেখা যায়।
প্রশ্নঃ কবে, কে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন?
উত্তরঃ ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারদারি ব্যবস্থা চালু করেন।
প্রশ্নঃ কবে, কেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়?
উত্তরঃ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়।
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের অন্যতম দুই উৎসাহী ব্যক্তির নাম লেখো।
উত্তরঃ জন শোর ও ফিলিপ ফ্রান্সিস ছিলেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনে দুই উৎসাহী ব্যক্তি।
প্রশ্নঃ 'জীবের শত্রু জীব' একথা কে বলেছিলেন?
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সমালোচনায় একথা বলেছিলেন।
প্রশ্নঃ 'মহল' কথাটির অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মহল' কথাটির অর্থ হলো কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি।
প্রশ্নঃ মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের হাতে জমি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল?
উত্তরঃ মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে।
প্রশ্নঃ রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় খাজনার হার কত ছিল?
উত্তরঃ ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ খাজনার হার ছিল।
প্রশ্নঃ রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের সঙ্গে কোম্পানির বন্দোবস্ত হয়?
উত্তরঃ রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কোম্পানির সাথে রায়তদের বন্দোবস্ত হয়।
প্রশ্নঃ মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের সাথে কোম্পানির জমি বন্দোবস্ত হয়েছিল?
উত্তরঃ মহলওয়ারি বন্দোবস্ত করা হয় গ্রাম সম্প্রদায়ের সাথে কোম্পানির।
প্রশ্নঃ অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ রেলপথ বানানো, রফতানির হার বাড়ানো ও কৃষিতে বানিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ কাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নীল চাষ করা হতো?
উত্তরঃ ইংল্যান্ডের কাপড়কলে নীলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নীল চাষ করা হতো।
প্রশ্নঃ কী কারণে ও কৰে নীল বিদ্রোহ হয়েছিল?
উত্তরঃ নীল চাষ শুরু হলে নীলচাষ করার জন্য চাষিদের দাদন নিতে বাধ্য করা হতো। তাদের উপর ইচ্ছামতো দমন পীড়ন চালানো হতো। তাই ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে চাবিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
প্রশ্নঃ কোথায় কোথায় বাগিচা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল?
উত্তরঃ আসাম, বাংলা, দক্ষিণ ভারত ও হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চা বাগিচা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল।
প্রশ্নঃ কৃষির বানিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল?
উত্তরঃ দেশের বিভিন্ন প্রাপ্তের কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্নঃ 'কুলি কাহিনী' নিবন্ধটি কার লেখা?
উত্তরঃ রামকুমার বিদ্যারত্নের লেখা।
প্রশ্নঃ প্রজাস্বত্ব আইন বা Tenancy Act কবে পাস হয়?
উত্তরঃ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রজাস্বত্ব আইন বা Tenancy Act পাস হয়।
প্রশ্নঃ কবে ব্রিটেনে সুতি কাপড় রপ্তানি বন্ধ হয়?
উত্তরঃ ১৭২০ সালে আইন করে ব্রিটেনে সুতিবস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা হয়।
প্রশ্নঃ কবে ও কেন কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল?
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ কোন কোন শহর কেন জৌলুস হারিয়েছিল?
উত্তরঃ মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, সুরাট প্রভৃতি শহর জৌলুস হারিয়ে ফেলে। কারণ এখানকার কুটির শিল্পগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ ভারতে ঔপনিবেশিক প্রশাসনের শিল্পনীতি কীভাবে নির্ধারিত হতে থাকে?
উত্তরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই ব্রিটেনের শিল্প চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসনের শিল্পনীতি নির্ধারিত হতে থাকে।
প্রশ্নঃ কোথায় প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয়?
উত্তরঃ বোম্বাইতে প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয়।
প্রশ্নঃ প্রথম পাটকল কোথায় চালু হয়?
উত্তরঃ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলির রিষড়ায় প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়।
প্রশ্নঃ বিংশ শতকের গোড়ায় কোন কোন শিল্প গড়ে উঠতে থাকে?
উত্তরঃ বিংশ শতকের গোড়ায় চামড়া, চিনি, লৌহ-ইস্পাত ও বিভিন্ন খনিজ শিল্প গড়ে উঠতে থাকে।
প্রশ্নঃ কবে ভারতে রেল প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেল প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল।
প্রশ্নঃ অরণ্যবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী রেলপথ নির্মাণকে মেনে নিতে পারেনি কেন?
উত্তরঃ কারণ রেলপথ বসাতে গিয়ে তাদের জমি, জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদাকে আঘাত করা হয়েছিল।
প্রশ্নঃ ভারতে কবে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ শুরু হয়?
উত্তরঃ ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মাত্র কয়েক মাইল জুড়ে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু হয়।
প্রশ্নঃ ভারত থেকে বছরে কী পরিমাণ সম্পদ ব্রিটেনে যেত?
উত্তরঃ ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে এক ব্রিটিশ আধিকারিকের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে বছরে ২-৩ কোটি স্টার্লিং মূল্যের সম্পদ ব্রিটেনে যেত।
প্রশ্নঃ কবে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ হয়?
উত্তরঃ ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ হয়।
প্রশ্নঃ ভারতে সম্পদ নির্গমনের জন্য ব্রিটিশ শাসন কীসের মতো কাজ করত?
উত্তরঃ ভারতে সম্পদ নির্গমনের জন্য ব্রিটিশ শাসন স্পঞ্জের মতো কাজ করত।
(৩) নিচের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ দাদন প্রথা বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ 'দাদন' কথাটির অর্থ অগ্রিম অর্থ প্রদান। পলাশির যুদ্ধের পর থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের কর্মচারী ও গোমস্তাদের মাধ্যমে দেশীয় তাঁতিদের দাদন বা অগ্রিম অর্থ দিত। কোম্পানির দাদন নেওয়ার ফলে তাঁতিরা তাদের উৎপন্ন দ্রব্য কোম্পানি ছাড়া আর কোথাও বিক্রি করতে পারত না। ক্ষতি স্বীকার করেও কম দামে তারা উৎপন্ন বস্ত্র কোম্পানিকে বিক্রি করতে বাধ্য হতো।
প্রশ্নঃ মহাজনি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ঔপনিবেশিক আমলে মহাজনদের সমাজে বিশেষ ভূমিকা দেখা দেয়। চড়া হারে ও নগদ অর্থে রাজস্ব মেটাতে প্রজাদের ঋণগ্রহণ করতে হতো। প্রজারা ছিল নিরক্ষর, এই সুযোগে মহাজনরা কারচুপি ও জালিয়াতি করে সুদ আদায় করে যেত। কোম্পানির আইন ছিল জমিদারদের জন্য ফলে আইনের সাহায্য নিয়ে মিথ্যা মামলা করে প্রজাদের সম্পদ তারা কেড়ে নিত। বিভিন্ন অঞ্চলে যে প্রজা বিদ্রোহ দেখা দিত তার আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল মহাজন ও মহাজনি ব্যবস্থা।
প্রশ্নঃ সম্পদ বহির্গমন ও অবশিল্পায়নের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তরঃ সম্পদের বহির্গমন ও অবশিল্পায়নের যৌথ ফলাফল হিসাবে ঔপনিবেশিক ভারতে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য বেড়েছিল। দুর্ভিক্ষের কারণে বহু লোক মারা গিয়েছিল। ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যায়ক্রমিক দুর্ভিক্ষের ফলে বহু লক্ষ মানুষ মারা যান। দুর্ভিক্ষগুলিতে সরকারি সাহায্যের পরিমাণও ছিল যৎসামান্য। ১৮৫৪ থেকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলেন। একটি সরকারী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৪ কোটি ভারতবাসী আধপেটা খেয়ে দিন কাটায়। দারিদ্র্য দীর্ঘস্থায়ী হবার জন্য ঔপনিবেশিক নীতিকেই মূলত দায়ী করা হয়েছিল।
প্রশ্নঃ অবশিল্পায়ন কী?
উত্তরঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই কোম্পানির হাত থেকে ভারতের বাজারের একচেটিয়া অধিকার চলে যায়। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্য ভারতে আমদানি করা হতে থাকে। ভারতীয় শিল্প ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর প্রতিযোগিতা ও বাধার সম্মুখীন হয়। দেশীয় শিল্পগুলি ক্রমশ ধ্বংস হতে থাকে, একে বলে অবশিল্পায়ন। বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মচ্যুত হন কারিগর ও শিল্পীরা জীবিকার জন্য চাষের কাজে যোগ দেয়। ফলে কৃষি অর্থনীতির উপর তীব্র চাপ পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বিদেশি দ্রব্যে ভারতের বাজারগুলি ছেয়ে যায়। বিভিন্ন দেশীয় শিল্পের অবনমন ঘটে। অবশিল্পায়নে সরকার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রশ্নঃ মহলওয়ারি ব্যবস্থা কী? এই ব্যবস্থার ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তরঃ উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত এলাকার ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রশাসন মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেছিল। এর জন্য সরকার মহলের জমিদার বা প্রধানের সঙ্গে চুক্তি করে। এই চুক্তির মধ্যে গোটা গ্রাম সমাজকে ধরা হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় কৃষক সমাজের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুরাহা হয়নি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজস্ব হার সংশোধন করা হতো। উঁচুহারে রাজস্ব আদায় করা হতো এবং বাড়তি রাজস্বের বোঝা মেটাতে গিয়ে ধার করা এবং সেই যার শোধ দিতে না পারায় অত্যাচার এসবের মুখোমুখি হতে হতো কৃষকদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকদের জমিগুলি মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল।
প্রশ্নঃ নীলবিদ্রোহ কেন ঘটেছিল?
উত্তরঃ পূর্ব ভারতে নীলচাষের জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দশজন নীলকরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বাংলায় নীলচাষ শুরু করেন। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমি কেনার বিষয়ে নীলকরদের অধিকার ছিল না। ফলে নীলকররা প্রথমে স্থানীয় কৃষকদের নীলচাষের জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করে। তাতে কাজ না হলে জোর করে অগ্রিম টাকা বা দাদন দিয়ে চাষিদের নীলচাষ করতে বাধ্য করে। এর ফলে বাংলার বহু অঞ্চলে নীলকর ও কোম্পানির সঙ্গে কৃষকদের সংঘর্ষের পথ প্রস্তুত হতে থাকে। তাছাড়া ক্রমেই চাষিদের উপর নীলচাষ করার জন্য দমন পীড়ন চলতে থাকে। এরই ফলে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলবিদ্রোহ ঘটে।
প্রশ্নঃ সূর্যাস্ত আইন কী?
উত্তরঃ জমিদারদের কাছে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রাথমিকভাবে জমির মালিকানা জমিদারদের হাতে থাকলেও জমির প্রকৃত মালিকানা ছিল কোম্পানির হাতে। নির্দিষ্ট একটা তারিখের মধ্যে সূর্য ডোবার আগেই প্রাপ্য খাজনা কোম্পানিকে জমা দিতে হতো। না পারলে জমিদারি অন্যত্র বিক্রি করার অধিকার কোম্পানির ছিল। এই ব্যবস্থা সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত ছিল।
(৪) নিচের রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
প্রশ্নঃ রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ভারতে কোম্পানির শাসন চালু হওয়ার পর ভূমি-রাজস্ব আদায়ের বিষয় নিয়ে কোম্পানি নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে। সে সময় মাদ্রাজ অঞ্চলে কোনো বড়ো মাপের জমিদার না থাকায় ব্রিটিশ কোম্পানি ভূমি-রাজস্ব বন্দোবস্তু সরাসরি কৃষকের সঙ্গেই করতে চেয়েছিল। মনে করা হয়েছিল যে কৃষক বা রায়তকে জমির মালিক, হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হলে তাদের উপর জমিদারের অত্যাচারকে এড়ানো যাবে। এই কারণে মাম্রাজ ও বোম্বাইতে চালু হয় রারতওয়ারি বন্দোবস্ত। এই বন্দোবস্ত চিরস্থায়ী করা হয়নি, তবে এই বন্দোবস্তের শর্ত ছিল রায়তকে ঠিক সময়ে ভূমি-রাজস্ব জমা দিতে হবে। ঔপনিবেশিক প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে রায়তকে খাজনা দিতে হবে। অনেক অংশেই এই খাজনার হার ছিল উঁচু। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলেও খাজনার হারে রদবদল হতো না। বাস্তবে জমিতে কৃষকের কোনো মালিকানা প্রতিষ্ঠা পায়নি। রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলে কৃষক সমাজ স্থানীয় জমিদারদের বদলে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অধীনে চলে যেতে থাকে।
প্রশ্নঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ ইজারাদারি ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে দশশালা ব্যবস্থা চালু করা হয়। কর্নওয়ালিস তাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রূপ দেন। এর ফলে জমিদারি থেকে কোম্পানির কত আয় হবে তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কর্নওয়ালিস আশা করেছিলেন জমিদারি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে জমিদাররা নিজেদের লাভের হার বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হয়ত চাষের উন্নতির দিকে নজর দেবে। কৃষকদের কল্যানের দিকেও নজর দেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পাশাপাশি জমিতে অধিকার স্থায়ী করার মাধ্যমে জমিদারদের কোম্পানির অনুগত গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়। সেই কারণে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি জমিদারদের সঙ্গে খাজনা আদায় বিষয়ক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে। এর ফলে কৃষকরা তাদের দখলি স্বত্ব হারিয়েছিল। অনেক জমিদারগণও নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের আগে খাজনা দিতে না পেরে জমিদারি হারিয়েছিলেন। ফলে নতুন নতুন জমিদার এসেছিলেন। তাঁরা বেশিরভাগই শহরে বাস করতেন। গোমস্তা, নায়েব প্রভৃতি জমিদারের কর্মচারীরা অত্যাচার করত ফলে কৃষকদের দুঃখ কষ্টের পরিসীমা ছিল না। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের সমৃদ্ধি বাড়লেও কৃষকের অবস্থার কোনো উন্নতিই হয়নি।
প্রশ্নঃ ‘সম্পদের বহিগমন' কাকে বলে? এর বিবরণ দাও।
উত্তরঃ উপনিবেশ হিসেবে পলাশির যুগের পরবর্তী পর্যায়ে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের সম্পদকে নানাভাবে ব্রিটেনে স্থানান্তরিত করা হতো। এইভাবে দেশের সম্পদ বিদেশে চালনা হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘সম্পদের বর্হিগমন' বলা হয়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পদের বহির্গমন। দেশের জনগণের থেকে রাজস্ব আদায় করে। দেশের শাসনবয়ে চালানোর প্রথা সুলতানি ও মুঘল আমলেও ছিল। কিন্তু এর জন্য দেশীয় কৃষি বা বাণিজ্য নষ্ট হয়নি। এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে সুলতানি ও মুঘল শাসকরা ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে থেকে এই দেশেরই জন্য আনুগত্য প্রকাশ করতেন। অপরদিকে ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি বরাবরই ব্রিটেনের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে কাজ করত। তাদের যাবতীয় উদ্দেশ্য ছিল ভারতের অর্থনীতিকে ব্রিটেনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। এর জন্য ভারতের অর্থ ও সম্পদ ব্রিটেনে স্থানান্তরিত করা হতো। বাস্তবে ভারতের সম্পদ বর্হিগমনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসন স্পঞ্জের মতো ভারত থেকে সম্পদ শুষে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিত। দেখা গেছে ঊনবিংশ শতক শেষ হওয়ার সময়ে ভারতীয় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ এবং জাতীয় সঞ্চয়ের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ নির্গত হয়ে যেত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঐ কালপর্বে ব্রিটেনের জাতীয় আয়ের ২ শতাংশই ছিল ভারত থেকে নির্গত সম্পদ।
Good 👍
উত্তরমুছুন