পরিবেশ ও ইতিহাস
ষষ্ঠ শ্রেণি
পূর্ণমান - ৫০
১. সঠিক শব্দ বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো :
(ক) এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে পুরোনো আদিম মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে __________ (এশিয়াতে/পূর্ব আফ্রিকাতে/ আমেরিকাতে)।
উত্তরঃ এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে পুরোনো আদিম মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে পূর্ব আফ্রিকাতে।
(খ) মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন __________ (জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ/চার্লস ম্যাসন/দয়ারাম সাহানি)।
উত্তরঃ মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ।
(গ) হরপ্পা সভ্যতা __________ যুগের সভ্যতা (প্রাক-ইতিহাস/প্রায়-ইতিহাস/ঐতিহাসিক)।
উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতা প্রাক-ইতিহাস যুগের সভ্যতা।
২. ক - স্তম্ভের সাথে খ-স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো :
উত্তরঃ
৩. বেমানান শব্দটি বেছে লেখো :
৩.১ সংহিতা, মহাকাব্য, আরণ্যক, উপনিষদ
উত্তর : মহাকাব্য
৩.২ ব্রহ্মচার্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, ব্রাহ্মন
উত্তর : ব্রাহ্মন
৩.৩ বিদথ, সভা, সমিতি, রত্নিন
উত্তর : রত্নিন
৪. সত্য বা মিথ্যা নির্ণয় করো :
৪.১ দক্ষিণ ভারতের একমাত্র মহাজনপদ ছিল অস্মক।
উত্তর : সত্য
৪.২ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শেষ জীবনে বৌদ্ধ হয়ে যান।
উত্তর : মিথ্যা
৪.৩ বিনয়পিটক গৌতম বুদ্ধের মূল কয়েকটি উপদেশের আলোচনা।
উত্তর : মিথ্যা
৫. দুটি - তিনটি বাক্যে লেখো :
৫.১ মেহেরগড় সভ্যতায় কোন্ কোন্ কৃষি পণ্য উৎপাদিত হত?
উত্তরঃ মেহেরগড় সভ্যতায় গম ও যব কৃষি পণ্য উৎপাদিত হত।
৫.২ উপমহাদেশের পুরোনো গুহা-বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে এরকম কয়েকটি স্থানের নাম লেখো।
উত্তরঃ উপমহাদেশের পুরোনো গুহা-বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে এরকম কয়েকটি স্থানের নাম -
(১) ভীমবেটকাঃ ভারতের মধ্য প্রদেশে।
(২) অজন্তাঃ ভারতের মহারাষ্ট্রে।
৫.৩ বেদের আরেক নাম শ্রুতি কেন?
উত্তর : বৈদিক সাহিত্য মূলত শুনে শুনে মনে রাখতে হত। তাই বেদের আরেক নাম শুতি।
৫.৪ জনপদ কী?
উত্তর : সাধারণ মানুষ বারবার জনগণ যেখানে বাস করত তাকে বলা হতো জনপদ অর্থাৎ জনগণ যেখানে সেটাই জনপদ।
৬. চার - পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও :
৬.১ মেগালিথ কী?
উত্তরঃ বড়ো পাথবের সমাধিকে মেগালিথ বলে। বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বড়ো বড়ো পাথর দিয়ে পরিবারের মৃত ব্যক্তিদের সমাধি চিহ্নিত করত। পাথরগুলির আকারও ছিল বিভিন্ন। কোনোটি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত, আবার কোনোটি বৃত্তাকার ছিল। এইসব সমাধিতে মানুষের কঙ্কাল ও তাদের ব্যবহারের জিনিস পাওয়া গেছে। তবে জিনিসের তফাত দেখে বোঝা যায় যে তৎকালীন সমাজে ধনী ও দরিদ্রের বিভেদ ছিল। কাশ্মীরের বুরজাহোম, রাজস্থানের ভরতপুর, মহারাষ্ট্রের ইনামগাঁও হলো বিখ্যাত মেগালিথ কেন্দ্র।
৬.২ জাতকের গল্পের মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তরঃ তিপিটকের মধ্যে জাতক নামে কিছু গল্প রয়েছে। মনে করা হয় গৌতম বুদ্ধ আগেও নানান সময়ে জন্মেছিলেন। সেই আগের এক একটি জন্মের কথা জাতকের এক একটি গল্পে বলা হয়েছে।
প্রতিটি গল্পের মধ্যে কিছু না কিছু উপদেশ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মপ্রচারের জন্যই জাতকের গল্পগুলি ব্যবহার করা হতো। পাঁচশোরও বেশি জাতকের গল্প রয়েছে। গল্পগুলি পালি ভাষায় বলা ও লেখা হতো। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও জাতকের গল্পে চরিত্র হিসাবে উঠে এসেছে। জাতকের গল্পগুলি থেকে সেই সময়ের সমাজ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারা যায়।
৬.৩ টীকা লেখো : অর্থশাস্ত্র
উত্তরঃ অর্থশাস্ত্র চাণক্য রচিত একটি সুপ্রাচীন রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গ্রন্থ। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে রচিত এই গ্রন্থটি প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রনীতি ও শাসনসংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ইতিহাস।
অর্থশাস্ত্র ১৫টি ভাগে বিভক্ত। এই ভাগগুলি ‘অধিকরণ’ নামে পরিচিত। গ্রন্থের মোট শ্লোকসংখ্যা ৬,০০০। রাজ্যশাসন, শত্রুদমন, রাজস্ব, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, পৌর প্রশাসন প্রভৃতি নিয়ে এই ১৫টি বিভাগের প্রতিটি রচিত। অর্থশাস্ত্রের সকল বক্তব্য পরিষ্কার ও স্ববিরোধিতাদোষ থেকে মুক্ত। বিশুদ্ধ রাজতন্ত্র অর্থশাস্ত্রের মতে শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সমর্থক অর্থশাস্ত্র। এছাড়া দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের স্বার্থে রাজকর্মচারী নিয়োগ কালে সাবধানতা, কৃষির উন্নতিকল্পে কৃষকদের উৎকৃষ্ট বীজ ও সার সরবরাহ, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সেচ ব্যবস্থার উন্নতির প্রস্তাব, জমির উপর চাষীর ন্যায্য অধিকার স্বীকার, নারীর বিশেষ অধিকার স্বীকার, বিবাহ বিচ্ছেদ ও বিধবা বিবাহের বিধান ব্রাহ্মণের বিশেষ অধিকার অস্বীকার ও অপরাধ অনুসারে ব্রাহ্মণেরও প্রাণদণ্ডের বিধান – এই সকল অর্থশাস্ত্রে প্রগতিশীল চিন্তা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত তার তত্ত্বগুলির জন্য তাকে ইতালির বিশিষ্ট রাষ্ট্রনীতিবিদ মেকিয়াভেলির সঙ্গে তুলনা করা হয়।
৬.৪ মৌর্য সম্রাটরা গুপ্তচর কেন নিয়োগ করতেন?
উত্তরঃ কারণ এই গুপ্তচররা বাদশাহকে সমস্ত কিছু সম্পর্কে অবহিত করেছিল, এমনকি সেই রাজ্যের মিনিট বিশদ যা রাজ্যকে যথাযথ এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছিল। গুপ্তচরদের এলোমেলোভাবে বাছাই করা হয়নি, পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছিল।
৬.৫ টীকা লেখো : হর্ষচরিত
উত্তরঃ শ্রীহর্ষবর্ধন ছিলেন পুষ্পভূতি রাজবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। রাজত্ব করেছেন ৬০৬ থেকে ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর সভাকবি বাণভট্ট লিখে গেছেন হর্ষচরিত। গবেষকরা প্রাচীন ভারত সম্পর্কে অনেক তথ্য খুঁজে পান হর্ষচরিতে।
৭. আট-দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
৭.১ তুমি কি মনে করো, আগুনের ব্যবহার মানুষের ইতিহাসে জরুরি একটি পরিবর্তন?
উত্তরঃ ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় আগুনের ব্যবহার ইতিহাসে একটি জরুরি পরিবর্তন, কেননা আগুনের ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছিল।
(১) মানুষ কাঁচা খাবার খাওয়ার পরিবর্তে আগুনে পুড়িয়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু করেছিল।
(২) আগুনের ব্যবহার জানার পর মানুষ প্রচন্ড শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুন জ্বালিয়ে রাখতো।
(৩) বিভিন্ন জন্তুর আক্রমনের হাঁত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আগুনের ব্যবহার করতো।
৭.২ বৈদিক যুগের ব্যবসা বাণিজ্য কেমন ছিল?
উত্তর : বৈদিক যুগের কৃষি অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে আদি বৈদিক যুগে কৃষিজ উৎপাদন ছিল না বলে সেই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচলন তত বেশি ছিল না, সরাসরি সমুদ্র বাণিজ্যের কোন কথার উল্লেখ ঋকবেদে পাওয়া যায় না।
তবে পরবর্তী যুগে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈদিক যুগের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।
৭.৩ নব্যধর্ম আন্দোলন কেন গড়ে উঠেছিল?
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ,অর্থনীতি ও রাজনীতি বদলাতে শুরু করে। কৃষি হয়ে ওঠে বেশিরভাগ মানুষের প্রধান জীবিকা। লোহার লাঙলের ব্যবহার বাড়ায় ফসলের উৎপাদন খুব বেড়ে যায়। পাশাপাশি নতুন নতুন নগর এই সময় গড়ে উঠছিল। সেগুলির বাসিন্দাদের একটা বড়ো অংশ ছিল ব্যবসায়ী ও কারিগর। ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই বেশ ধনী ছিল।
যজ্ঞ, পশুবলি ও যুদ্ধের ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের নানা ক্ষতি হতো। চাষের কাজে গবাদিপশুর প্রইয়োজন হতো। তাই যজ্ঞে পশুবলি দেওয়া কৃষকদের পক্ষে মেনে নেওয়া সহজ ছিল না।
পাশাপাশি বিভিন্ন জনপদ ও উপজাতিগুলির মধ্যে লড়াই - ঝগড়া ব্যবসার ক্ষতি করেছিল। অথচ নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাও ব্যবসার জন্য জরুরি ছিল। ধর্মের নামে বেড়েছিল আড়ম্বর ও অনুষ্ঠান।
বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রযাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হতো। অথচ সমুদ্রযাত্রাকে পাপ হিসাবে দেখত ব্রাম্মণেরা। ব্যবসা চালাতে গেলে পয়সার লেনদেন ও সুদে টাকা খাটানোর দরকার পড়ত। কিন্তু সুদ নেওয়া ব্রাম্মণ্য ধর্মে নিন্দার বিষয় ছিল।
লোহার তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। ফলে ক্ষত্রিয়রা ব্রাম্মণদের সমান ক্ষমতা দাবি করতে থাকে।
এইভাবে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ ব্রাম্মণদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। ব্রাম্মণ্য ধর্মের বদলে নতুন সহজ সরল ধর্মের খোঁজ শুরু হয়েছিল। সেই চাহিদা পূরণ করেছিল বেশ কিছু ধর্ম, যার মধ্যে প্রধান দুটি হলো জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম ব্রাম্মণ্য ধর্মের যজ্ঞ ও আচার অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছিল এইসব ধর্মগুলি। সহজ সরল জীবন্যাপনের ওপরে তারা জোর দিয়েছিল। ব্রাম্মণ্য ধর্মের ও বেদের বিরোধিতা করে ধর্ম সম্পর্কে অনেক নতুন কথা বলেছিলেন এইসব ধর্মের প্রচারকরা। নতুন এই ধর্মমতগুলিকেই নব্যধর্ম বলা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ